﴿تَرْمِيهِم بِحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ﴾
৪) যারা তাদের ওপর নিক্ষেপ করছিল পোড়া মাটির পাথর৷৬
৬. মূল শব্দগুলো হচ্ছে , ( আরবী -----------------) অর্থাৎ সিজজীল ধরনের পাথর। ইবনে আব্বাস বলেন , এ শব্দটি মূলত ফারসীর " সংগ" ও " গীল " শব্দ দু'টির আরবী করণ। * এর অর্থ এমন পাথর যা কাদা মাটি থেকে তৈরি এবং তাকে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়েছে । কুরআন মজীদ থেকে ও এই অর্থের সত্যতা প্রমাণ হয়। সূরা হূদের ৮২ ও সূরা হুজুরাতের ৪ আয়াতে বলা হয়েছে , লূত জাতির ওপর সিজজীল ধরনের পাথর বর্ষণ করা হয়েছিল এবং এই পাথর সম্পর্কে সূরা যারিয়াতের ৩৩ আয়াতে বলা হয়েছে , সেগুলো ছিল মাটির পাথর অর্থাৎ কাদামাটি থেকে সেগুলো তৈরি করা হয়েছিল।
মাওলানা হামীদুদ্দিন ফারাহী মরহুম ও মগফুর বর্তমান যুগে কুরআনের অর্থ বর্ণনা ও গভীর তত্ত্ব অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি এ আয়াতে " তারমীহিম " ( তাদের ওপর নিক্ষেপ করছিল) শব্দের কর্তা হিসেবে মক্কাবাসী ও অন্যান্য আরববাসীদেরকে চিহ্নিত করেছেন। " আলাম তারা " ( তুমি কি দেখনি ) বাক্যাংশেও তাঁর মতে এদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। পাখিদের সম্পর্কে তিনি বলেন , তারা পাথর নিক্ষেপ করছিল না বরং তারা এসেছিল আসহাবে ফীলের লাশগুলি খেয়ে ফেলতে। এই ব্যাখ্যার সপক্ষে তিনি যে যুক্তি দিয়েছেন তার নির্যাস হচ্ছে এই যে , আবদুল মুত্তালিবের আবরাহার কাছে গিয়ে কা'বার পরিবর্তে নিজে উট ফেরত নেবার জন্য দাবী জানানোর ব্যাপারটি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্য দিকে কুরাইশরা এবং অন্যান্য যেসব লোকেরা হজ্জের জন্য এসেছিল তারা হানাদার সেনাদলের কোন মোকাবেলা না করে কাবাঘরকে তাদের করুণা ও মেহেরবানির ওপর ছেড়ে দিয়ে নিজেরা পাহাড়ের ওপর গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় লাভ করবে , একথাও দুর্বোধ্য মনে হয়। তাই তাঁর মতে আসল ঘটনা হচ্ছে , আরবরা আবরাহার সেনাদলের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে এবং আল্লাহ পাথর বর্ষণকারী ঝড়ো বাতাস প্রবাহিত করে এই সেনাদলকে বিধ্বস্ত করেন। তারপর তাদের লাশ খেয়ে ফেলার জন্য পাখি পাঠান । কিন্তু ভূমিকায় আমরা বলেছি , আবদুল মুত্তালিব তার উট দাবী করতে গিয়েছিলেন , রেওয়ায়াতে কেবল একথাই বলা হয়নি। বরং রেওয়ায়াতে একথাও বলা হয়েছে যে , আবদুল মুত্তালিব তাঁর উটের দাবীই জানাননি এবং আবরাহাকে তিনি কাবা আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টাও করেছিলেন । আমরা একথাও বলেছি , সমস্ত নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত অনুযায়ী আবরাহা মহররম মাসে এসেছিল। তখন হাজীরা ফিরে যাচ্ছিল আর একথাও আমরা জানিয়ে দিয়েছি যে , ৬০ হাজার সৈন্যের মোকাবেলা করা কুরাইশদের ও তাদের আশেপাশের গোত্রগুলোর সামর্থের বাইরে ছিল। আহযাব যুদ্ধের সময় বিরাট ঢাক ঢোল পিটিয়ে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে আরব মুশরিক ও ইহুদি গোত্রগুলোর যে সেনাদল তার এনেছিল তার সংখ্যা দশ বারো হাজারের বেশী ছিল না। কাজেই ৬০ হাজার সৈন্যের মোকাবেলা করার সাহস তারা কেমন করে করতে পারতো ৷ তবুও এ সমস্ত যুক্তি বাদ দিয়ে যদি শুধু মাত্র সূরা ফীলের বাক্য বিন্যাসের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যায় তাহলে এ ব্যাখ্যা তার বিরোধী প্রমাণিত হয়। আরবরা পাথর মারে এবং তাতে আসহাবে ফীল মরে ছাতু হয়ে যায় আর তারপর পাখিরা আসে তাদের লাশ খাবার জন্য , ঘটনা যদি এমনি ধরা হতো তাহলে বাক্য বিন্যাস হতো নিম্নরূপভাবে :
আরবী ----------------------------------------------------------------------------------
( তোমরা তাদেরকে মারছিলে পোড়া মাটির পাথর । তারপর আল্লাহ তাদেরকে করে দিলেন ভুক্ত ভূষির মতো। আর আল্লাহ তাদের উপর ঝাঁকে ঝঁকে পাখি পাঠালেন ) কিন্তু এখানে আমরা দেখছি , প্রথমে আল্লাহ পাখির ঝাঁক পাঠাবার কথা জানালেন তারপর তার সাথে সাথেই বললেন : ( আরবী -----------------------) অর্থাৎ যারা তাদেরকে পোড়া মাটির তৈরী পাথরের কুচি দিয়ে মারছিল। সবশেষে বললেন , তারপর আল্লাহ তাদেরকে ভুক্ত ভুষির মতো করে দিলেন।
* সংগ মানে পাথর এবং গীল মানে কাদা । - অনুবাদক
﴿فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُولٍ﴾
৫) তারপর তাদের অবস্থা করে দেন পশুর খাওয়া ভূষির মতো৷৭
৭. আসল শব্দ হচ্ছে , ( আরবী ---------------------------) আসফ শব্দ সূরা আর রহমানের ১২ আয়াতে এসেছে : (আরবী -------------------------) " শস্য ভূষি ও চারাওয়ালা ।" এ থেকে জানা যায় , আসফ মানে হচ্ছে খোসা , যা শস্য দানার গায়ে লাগানো থাকে এবং কৃষক শস্য দানা বের করে নেবার পর যাকে ফেলে দেয় তারপর পশু তা খেয়ে ও ফেলে। আবার পশুর চিবানোর সময় কিছু পড়েও যায় এবং তার পায়ের তলায় কিছু পিশেও যায়।
Comments 0