Home  • Online Tips • Religious

দারসুল কোরআন

বিষয়: মানবতার মুক্তির জন্য জিহাদ সূরা নিসা: ৭৫-৭৬ اعوذ بالله من الشيطن الرجيم - بسم الله الرحمن الرحيم - وما لكم لا تقاتلون فى سبيل الله والمستضعفين من الرجال والنساء والولدان الذين يقولون ربنا اخرجنا من هذه القرية الظالم اهلها واجعل لنا من ادنك وليا واجعل لنا من لدنك نصيرا- الذين امنوا يقاتلون فى سبيل الله والذين كفروا يقاتلون فى سبيل الطاغوت فقاتلوا اولياء الِشيطان ان كيد الشيطان كان ضعيفا-(سورة النساء-৭৫- ৭৬) অনুবাদ: (হে মুমিনগণ) তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করছো না সেসব দুর্বল পুরুষ, অসহায় নারী ও শিশুদের জন্য, যারা (উৎকণ্ঠার সাথে) বলে হে আল্লাহ ! আমাদের এই অত্যাচারী জনপদ থেকে উদ্ধার কর। আর তোমার পক্ষ থেকে অভিভাবক পাঠাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ থেকে সাহায্যকারী পাঠাও। আর মুমিনতো তারাই যারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পথে। সুতরাং তোমরা শয়তানের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই কর। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত অত্যন্ত দুর্বল। (সূরা নিসা: ৭৫-৭৬ ) নামকরণ: আলোচ্য সূরাটির প্রথম আয়াতের ‘নিসা’ শব্দ থেকে অত্র সূরার নামকরণ করা হয়েছে। নাযিলের সময়কাল: সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। বিষয়বস্তু ও ঘটনাবলীর দিকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে সূরাটি ওহুদ যুদ্ধের পর অর্থাৎ তৃতীয় হিজরীর শেষের দিকে নাযিল হয়েছে। আলোচ্য বিষয়: সূরাটির নামকরণ এর দিকে লক্ষ্য করে যদিও ‘নিসা’ তথা নারীদের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মনে হয় । তথাপি এই সূরায় নারীদের প্রসঙ্গ ছাড়াও ইসলামী সমাজের আইন কানুন, বিয়ে-শাদি, ইয়াতিমের সম্পদের অধিকার, মীরাসের বন্টন বিধি, লেনদেন পদ্ধতি এবং ঘরোয়া বিবাদ মেটানোর পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। অপরাধের শাস্তি বিধান, মদ পান এবং মানবতার মুক্তির জন্য জিহাদের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। সব শেষে ইহুদি, খ্রীষ্টান ও মুশরিকদের দীন ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। শানে নুযুল: রাসূল সা. যখন মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেন। তখন মক্কায় এমন কিছু দুর্বল মুসলিম সেখানে থেকে গিয়েছিল যারা শারিরীক দুর্বলতা এবং আর্থিক অনটনের কারণে হিজরত করতে পারেনি। পরে কাফেররা তাদের হিজরত করতে বাধা প্রদান করে এবং তাদের জুলুম নির্যাতন চালাতে শুরু করে। কিন্তু নবী সা. এর এসকল সাহাবী নিজের ঈমানী শক্তি বলে সকল অত্যাচার সহ্য করেও ঈমানের উপর টিকে থাকেন। এসব অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য তার আল্লাহর দরবারে ধরণা দিতে থাকেন। আল্লাহ পাক তাদের ফরিয়াদ কবুল করে মুসলমানদেরকে জিহাদ করে নির্যাতিত, অসহায়দের উদ্ধারের নির্দেশ দিয়ে অত্র আয়াত নাযিল করেন। ব্যাখ্যা: আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে মক্কায় থেকে যাওয়া দুর্বল অসহায় নারী পুরুষ এবং শিশুদের মক্কার কাফেররা ইসলামের পথ পরিহার করার জন্য শাস্তি দিয়ে থাকে। কিন্তু তারা কঠিন নির্যাতন সহ্য করেও ঈমানের উপর টিকে থাকে। ইসলাম ত্যাগ করতে তারা রাজি ছিল না। এজন্য তারা আল্লাহর কাছে যে দুইটি ফরিয়াদ করেছেন- আল্লাহ পাক এই মজলুমের দুইটি ফরিয়াদ কবুল করেন। তাই আল্লাহ মক্কার দুর্বল অসহায় লোকদের ডাকে সাড়া দিয়ে মদিনার মুসলমানদেরকে উল্লেখ করে বলেন- তোমাদের কি হলো যে তোমরা এমন অসহায় দুর্বল বন্দী নির্যাতিত মুসলমানদেরকে উদ্ধারের জন্য জেহাদ করছো না। সেখানে অমানবিক নির্যাতনের দ্বারা মানবতা লুন্ঠিত হচ্ছে। অথচ মজলুমকে সাহায্য করা মনবতাকে রক্ষা ইসলামের ্এÍকটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। এ আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় জিহাদের নির্দেশ দেওয়ার পরিবর্তে “ওয়ামা লাকুম লা তুক্বাতিলুনা” বাক্য ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এমন পরিস্থিতিতে জিহাদ করাই স্বাভাবিক দায়ীত্ব। যা না করা কোন ভালো মানুষের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। তৎকালীন যুগের মত বর্তমান যুগেও সারা দুনিয়াতে অনেক মুসলমান নর-নারী নির্যাতিত হচ্ছে। জাহেলরা মুসলামনদের নাম মুছে ফেলার জন্য উঠে পড়ে লেগে মুসলামানদের হত্যা, খুন, বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে এবং নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। কারণ কোরআনের প্রতিটি আদেশ নিষেধ কেবল কোরআন নাযিলের সময়ের লোকদের জন্য-ই নির্দেশ নয়। বরং তার আদেশ নিষেধ চিরকালীন সব সময়ের জন্য এবং ক্বিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত বলবত থাকবে। সুতরাং সারা দুনিয়াতে নির্যাতিত মানুুষের নির্যাতন দূর করার জন্য প্রত্যের উপর জিহাদ করা সবচেয়ে বড় ফরজ। পরবর্তী আয়াতে ঈমানদারদের করণীয় সম্পর্কে পরিস্কার ভাষায় উল্লেখ করেন। ‘আর মুমিনতো তারাই যারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পথে।’ উক্ত আয়াতের অর্থই পরিস্কার করে দেয় যে যারা ঈমান এনেছে তাদের জিহাদ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ। তারা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর রাসূলকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তাঁর দীনকে বিজয়ী করার জন্য। هو الذي ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله- ‘তিনি সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে সঠিক পথ এবং সত্য দীন সহকারে প্রেরণ করেছিলেন, যাতে তিনি এই দীনকে অন্য দীনের উপর বিজয়ী করেন।(সূরা সফ)’। মুমিনরা আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করার জন্য লড়াই করতে যেয়ে মারে এবং মরে। বিনিময়ে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত প্রদান করবেন। (সূরা তাওবা)। আরা যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না অর্থা বেদীন। তাদের সকল প্রচেষ্টাই হয় শয়তানের পথে। দুনিয়াতে সব সময় দুইটি দল থাকবে। একটি আল্লাহর দল এবং অপরটি শয়তানের। কুরআনের ‘হিযবুল্লাহ’ ও ‘হিযবুশশয়তান’ বলে এই দুই দলের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। ‘সুতরাং তোমরা শয়তানের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই কর। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত অত্যন্ত দুর্বল।’ এখানে শয়তানের দোসরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে শয়তানকে মানুষের প্রকাশ্য শত্র“ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাই বিভিন্ন পর্যায় (দাওয়াত, সত্যের সাক্ষী হওয়া, লড়াই করা, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ) অনুসরণ করার মাধ্যমে শয়তান এবং তার দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহপাক আয়াতের শেষাংশে মুমিনদের ভরসা দেওয়ার জন্য বলেছেন যে, শয়তানের চক্রান্ত অত্যন্ত দুর্বল। অর্থাৎ মুমিনরা আল্লাহর পথে লড়াই করলে আল্লাহ পাক অবশ্যই তাদের সাহায্য করবেন। এর প্রমাণ বদর, ওহুদ সহ বিভিন্ন যুদ্ধে আল্লাহ পাক দেখিয়েছেন। তবে শর্ত হচ্ছে অবশ্যই এখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকবে না। শিক্ষা : ১। দুর্বল, অসহায়দের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে হবে। ২। আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করতে হবে। ৩। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সংগ্রাম করতে হবে। দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যে নয়। ৪। বাতিলের পবর্ত সমান শক্তি ও চক্রান্তকে ভয় করা যাবে না। স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।

Comments 0


About Author
Md. Raufur Rahman
Copyright © 2025. Powered by Intellect Software Ltd