ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক স্থানীয় ধর্মমত একত্রে হিন্দুধর্ম নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে, লৌহযুগ থেকে ঘটতে থাকা ভারতের ধর্মবিশ্বাসের নানা বিবর্তন এই ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই মতের উৎস আবার ব্রোঞ্জযুগীয় সিন্ধু সভ্যতা ও তৎপরবর্তী লৌহযুগীয় বৈদিক ধর্ম।
খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর পর ধীরে ধীরে ভারতে বৌদ্ধধর্মের পতন ঘটলে বৈদিক ধর্মের নবজাগরণের রূপে ধ্রুপদি হিন্দুধর্মের উত্থান ঘটে। সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত – হিন্দু দর্শনের এই ছয়টি প্রধান শাখার উদ্ভব ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে। প্রায় একই সময়ে ভক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে উদ্ভব ঘটে শৈবধর্ম ও বৈষ্ণবধর্মের মতো একেশ্বরবাদী মতবাদগুলির।
ধ্রুপদি পৌরাণিক হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠালাভ করে মধ্যযুগে। আদি শংকরের অদ্বৈত বেদান্ত মতবাদও এই সময় প্রচারিত হয়। উক্ত মতবাদ বৈষ্ণব ও শৈব মতবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং স্মার্তধর্মের উত্থান ঘটায়। এর ফলে দর্শনের অবৈদান্তিক শাখাগুলির অবলুপ্তি ঘটে।
ভারতে মুসলমান শাসনকালে হিন্দুধর্ম ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। এই আন্দোলনের ফলস্রুতি অদ্যাবধি বিদ্যমান। আবার ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনকালে পাশ্চাত্য ভাবধারার অনুপ্রেরণায় হিন্দুধর্মে একাধিক সংস্কার আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই সকল ভাবধারার মধ্যে একটি উল্লেখ্যযোগ্য ভাবধারা ছিল স্পিরিটিজম (থিওজফি)। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ভারতীয় প্রজাতন্ত্র একটি হিন্দুপ্রধান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
বিংশ শতাব্দীতে অনাবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় সংগঠিত হয়। অনাবাসী হিন্দুদের বৃহত্তম আবাসস্থল হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ১৯৮০-এর দশকে ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সত্ত্বারূপে আত্মপ্রকাশ করে। হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন থাকে এবং ২০০৬ সালে দক্ষিণ ভারতে (কর্ণাটক রাজ্যে) প্রথম রাজ্য সরকার গঠন করে।
-উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Comments 2