শবে বরাত উপমহাদেশের মুসলামানদের মধ্যে বিশেষ করে ভাব-গার্ম্ভির্যের মধ্য দিয়ে পালিত একটি পূন্যময় রজনী। শব ফারসী শব্দ। অর্থ রাত বা রজনী। বরাত শব্দটিও ফারসি, অর্থ ভাগ্য। শবে বরাত মানে ভাগ্য রজনী। যে রাতে বান্দার বিগত বছরের পাপ-পূর্ণ্য হিসাব করে মহান আল্লাহপাক পরবর্তী বছরের জন্য ভাগ্য পুননির্ধারণের উদ্যেগ গ্রহণ করেন, তাকে শবে বরাত বলা হয়। রাসূল পাক (সা.) এ রাতে বিশেষ ইবাদতে মগ্ন থেকেছেন। সুফি সাধকগণও যুগ যুগ ধরে লাইলাতুল বরাত রাতে তাদের অনুসারিদেরকে নিয়ে ভাগ্য সুপ্রসন্ন করার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দরখাস্ত করেন। হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “এক রাতে আমি হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে হারিয়ে ফেললাম (বিছানায় পেলাম না)। আমি খুঁজতে বের হলাম । এসে দেখি রাসুল (সা) জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে আছেন। তিনি বলেন, তুমি কি ভয় করছ মহান আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল তোমার প্রতি কোন অন্যয় করেবন? আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি ধারণা করলাম আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবান (১৫ তারিখ রাতে) পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে অবতীর্ণ হন। অতঃপর কালব গোত্রের বকরী পালের লোমের চেয়েও বেশি সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে দেন ।” (তিরমিযী শরীফ)।
নবীজি শাবান মাসকে বরাতের রজনীর জন্য অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। “হযরত উম্মে সালামা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) কোন বছর-ই রমজানের নিকটবর্তী শানাব মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখতেন না”(আবু দাউদ)। অন্যদেরকেও শাবানের মধ্যভাগ তথা শব-ই-বরাতের ইবাদতের ব্যাপারে নবীজি বিশেষ তদারকী করতেন। ইমরান ইবনে হোসায়েন (রা) বলেছেন যে, “রাসূল পাক (সা.) তাকে অথবা অপর কাউকে জিজ্ঞেস করেলন, তুমি কি শাবান মাসের মধ্যভাগ (শব-ই-বরাত) রোজা রেখেছিলে? তিনি বললেন না। তখন রাসূলে পাক (সা.) বললেন, যখন তুমি রাখনি তখন দুদিন (রোজার শেষে) রোজা রেখে দিও ”(মুসলিম শরীফ)। বরাতের রজনী হল বান্দার জন্য ক্ষমা লাভের এক অন্যন্য উপলক্ষ। রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাত আসবে তখন তোমরা জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে। আর পর দিন রোজা রাখবে। কেননা আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের পরই সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং তার বান্দাদেরকে ডেকে বলেন, ওহে আছো কোন ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করব। আছো কোন রিজিকপ্রার্থী? আমি তোমাকে রিজিক দিব। আছো কোন বিপদগ্রস্থ? আমি তোমাকে বিপদমুক্ত করব। আছো তোন তওবা কারী? আমি তোমার তওবা কবূল করব। এভাবে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ আহ্বান করতে থাকেন।(ইবনে মাজাহ)
মূলত শব-ই-বরাতের রাতে সহীহ্ তাওবার মাধ্যমে নিষ্কৃতিলাভ করা সম্ভব। তাই সকলে আমরা পূর্বের যাবতীয় গুনাহর কথা স্বরণ করে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট খাস দিলে তাওবা করলে আল্লাহ অতীতের গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন।
Comments 2