ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম হচ্ছে রোজা। নামাজের পরেই মুসলমানদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা যে ইবাদত ফরজ করেছেন, তা হচ্ছে মাহে রমজানের রোজা। দ্বিতীয় হিজরিতে উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়। তবে এই রোজা অন্যান্য জাতির উপর ফরজ ছিল। আরবি ‘রামাদান’ শব্দটি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন , প্রজ্জ্বলন, জালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রমজান মাসে সিয়াম সাধনা তথা রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা করে আন্মসংযম ও কৃচ্ছ্রপূর্ন জীবন যাপন করে এবং ষড়রিপুকে দমন করে মহান আল্লাহর একনিষ্ট বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীন যাবতীয় অহংকার, কৃপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এই মহিমান্বিত মাসের নাম রমজান।
অসাধারণ ফযিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ মাহে রমজান সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের ইমানী চেতনা সুদৃঢ় হয়, তাকওয়া বা আল্লাহভীতির নিদর্শন প্রকাশ পায় এবং অত্যন্ত গভীর ভাবে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি সঞ্চায়িত হয়। ইসলামের অন্যন্য বহু আদেশ নির্দেশের মত রোজাও ক্রমিক নিয়মে ফরজ করা হয়েছে। মাহে রজমানে সিয়াম সাধনা ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাসে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবর্তর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্য যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না, এ জন্য যে তোমরা (রোজার ) সংখ্যাপূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎ পথে পরিচালনা করবে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। ’(সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৫) । একদা নবী করিম (সা.) মাহে রমজানের প্রক্কালে বলেন, ‘রমজান মাস আগত প্রায়, এ মাস বড়ই বরকতের মাস, আল্লাহ তায়ালার রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাস বহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন এবং দোয়া কবুল করেন। ’ তাই রমজান মাস ইসলামের অনুসারীদের জন্য আল্লাহ তায়ালার বিরাট নেয়ামত। এ নেয়ামত কদর করা না হলে মাহে রমজানের কোনো মূল্য বা মর্যাদা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় না। বস্তুত, মাহে রহমান মুসলামনাদের জন্য অত্যন্ত মোবারক, রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস।
এই মহান মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। রমজান মাসের সম্মানজনক মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আগত হয় তখন আকাশ বা বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা খোলা হয় না, আর শয়তানকে জিঞ্জিরে বন্দী করা হয়’ (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক বেহেশতে সওগাত এই রমজান মাস। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে যে তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতময় পবিত্র মাহে রমজানে রোজা পালনকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা পুরস্কারের ঘোষনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : আদম সন্তানের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, তবে রোজা ব্যতীত, কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব’ (বুখারী ও মুসলিম)। শাবান মাসকে রমজান মাসের প্রস্তুতিমূলক মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাবান মাসের সমাপনান্তে মাহে রমজানের এক ফালি রুপালি চাঁদ পশ্চিম আকাশ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন একজন মুমিন মুসলমান মনে ইস্পাতকঠিন ঈমান ও ব্যপক উৎসাহ-আগ্রহভরে মাসব্যপী সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যে নিয়ত করে ফেলেন ও রোজা আদায়ে মশগুল হয়ে যান, তখনই তিনি মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতের চাদর দ্বারা আবৃত হয়ে পড়েন। ফলে ইহজগতের শান্তি ও পরলৌকিক কল্যান ও মুক্তির সনদ তাঁর জন্য ঘোষনা করা হয়।
হাদিসে শরিফে বর্ণিত আছে, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি ভাল কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করে দেওয়া হবে। ’(মুসলিম শরিফ)। মাহে রমজান এমন এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে রাসুলূল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামদের মোবারকবাদ পেশ করতেন এবং এ মর্মে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। (মুসলিম শরীফ)’। অন্য এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মত যদি মাহে রমজানের গুরুত্ব বুঝত, তাহলে সারা বছর রমজান কামনা করত। ’ সুতরাং এ শ্রেষ্ঠতম মাসে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপানে ধাবিত হওয়ার প্রচেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলামানের জন্য অবশ্যকর্তব্য। আল্লাহ আমাদের রমজান মাসের পূর্ণ হক আদায় করার তওফিক দান করুক ।(আমিন)
Comments 0