ফাজায়েলে রমযান ও রমজানের করণীয় আমল সমূহ
রমযানের ফযিলত
রমজানের মাসের রোজা রাখা ইসলামের তৃতীয় ফরজ। যে ব্যাক্তি রমযানের রোযা ফরয হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সে মুসলমান থাকে না। আআর যে রোযার ফরয কে স্বীকার করে কিন্তু রোযা রাখে না সে মারাত্মক গোনাহগার-ফাসেক। বস্তুতঃ রমযান মাস হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহের মাস। রমযান মাস হচ্ছে বান্দার গোনাহ মাফের মাস। রমযান মাস হচ্ছে, দোযখের আগুন থেকে মুক্তির মাস। রমযান মাস হচ্ছে অধিক নেকি কামাই করার মাস। রমযান মাস হচ্ছে, আল্লাহ ওয়ালা হওয়ার মাস। রমযান হচ্ছে আত্মশুদ্ধির মাস।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মুমিমগণ! তোমাদের ওপর (রমযানের) রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (আল-কুরআন)
• হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের উদ্দেশ্যে রোজা রাখে, আল্লাহপাক তার পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।”-বুখারী
• হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, “রমযান মাস এলে বেহেশতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়, দোযখের সাতটি দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং অবাধ্য শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।”-বুখারী
• হাদীসে কুদসীসে আছে, আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন- “আমলনামায় নেক কাজের সওয়ার দশ গুন থেকে পর্যন্ত লেখা হয়; কিন্তু রোযা বিশেষভাবে আমারই জন্য, আমি নিজেই এর বদলা দান করব।”-বুখারী
• হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক জিনিসের দরজা আছে, আর ইবাদতের দরজা হল রোযা।
• হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে সে ব্যাক্তি রোযাদারের সমতূল্য সওয়াব পাবে। আর এতে রোযাদারের সওয়াবের একটুও কমতি হবে না। -তিরমিযী
• হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, “রমযানের প্রথশ দশ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য। ”-বায়হাকী
• হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যাক্তি রোজা রেখেও গোনাহের কথাবার্তা ও কাজ-কর্ম ত্যাগ করলো না সে শুধু খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে উপবাসই থাকলো, সুতরাং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে এর কোন মূল্য নেই। ”
• হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, “ যে ব্যাক্তি শরীয়ত সম্মত কারন ব্যতীত রমযানের একটি রোযা ছেড়ে দিলো, সে যদি সারা জীবনও রোযা রাখে, তবুও ওই রোযাটির ফযীলত লাভ করতে পারবে না। ”
রোযার নিয়ত
ইসলামী দিনপঞ্জী হিসেবে সূর্যাস্তের পর থেকে নতুন দিন আরম্ভ হয়। কাজেই রাতে অথবা দিনে বেলা ১১ টার মধ্যে এরকম নিয়ত করবে, আমি আজ রোযা রাখলাম। রোযার নিয়তও মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরী হয়।
সাহরী ও ইফতার
রোযাদারের জন্য সাহরী খাওয়া ও ইফতার করা সুন্নত। তেমন কিছু না থাকলে সামান্য খাদ্য খেলে বা কেবল পানি পান করলেও সাহরী-ইফতারের সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
ইফতারে অধিক সময় নেয়া প্রসঙ্গ
আজকাল আমাদের ইফতারিতে এতো বেশি পরিমান খাদ্য উপকরণ থাকে যা খেতে খেতে মাগরিবের নামায অনেক বিলম্বে আদায় করা হয়। দীনী মাসা’আলা জানা না থাকার কারণে অধিকাংশ মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিগণের নির্দেশে ইমাম সাহেবগণ প্রায় ২০-২৫ মিনিট সময় দেরি করে জামা’য়াত শুরু করেন। ইফতার পার্টির ব্যাপক প্রচলত ঘটায় মানুষের কাছ থেকে জোর জবরদস্তী করে চাঁদাও আদায় করা হচ্ছে। সারাদিন রোযা রেখে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বলপূর্বক চাঁদা আদায় করা হারাম খাদ্যের দ্বারা ইফতার করানো হচ্ছে। এদিকে পর্দার বিষয়টি মাথায় না রেখে নারী-পুরুষ এক সঙ্গে বসে ইফতার করে। অবিরতভাবে ছবি ওঠানো হয়, যা করা ঠিক নয়। ইফতারের পূর্বের দু’আ কবূলের মুবারক সময়ে এমন হৈ চৈ হতে থাকে, যেনো বাজারের পরিবেশ। এ বিষয়গুলো সংশোধন করা জরুরী।
রোযাদারের করণীয় আমল সমূহ
অধিক পরিমানে কালেমায়ে তাইয়ি্বাহ পাঠ করা।
অধিক পরিমানে তাওবা ইস্তিগফার করা্
আল্লাহ পাকের নিকট বেহেশত পাওয়া এবং দোযখ থেকে মুক্তির জন্য এই দু’আ বেশি বেশি পড়া
যতো অধিক সম্ভব কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।
২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে তিনশত বার দরূদ শরীফ পাঠ করা।
জামায়াতের সাথে এবং তাকবীরে উলার সঙ্গে নামায আদায়ের ব্যাপারে পুরুষদের খুব বেশি যত্নশীল হওয়া।
তারাবীহের জন্য ইশার নামাজের পূর্বেই উপস্থিত থাকা।
ই’তিকাফের নিয়তে অবসর সময়ে মসজিদে অবস্থান করা।
সাধ্যনুযায়ী দান-খয়রাত করা।
খুব বেশি দু’আ করা। কেননা, এই মাসে রোযাদারেএ দু’আ ব্যর্থ হয় না। নিজের ইমানের আমলের দুঢ়তা ও নিজ ইসলাম এবঙ উম্মতের ইসলাহের জন্য দু’আ করা।
Comments 2