মাহে রমজান ও রোজা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
১. প্রশ্ন : কোনো নারী যদি রমজান মাসে কোনো ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখে, তাহলে ওই দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারবে কি না এবং এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর : রমজান মাসে কোনো মহিলা ওষুধ সেবন করে স্রাব বন্ধ রাখলে তাকে রোজা রাখতে হবে। এ রোজাগুলো ত্রুটিযুক্ত হবে না; বরং পূর্ণ সহিহ বলেই গণ্য হবে। উল্লেখ্য, ঋতুস্রাব মহিলাদের একটি স্বাভাবিক বিষয়। তাই শরিয়ত এ অবস্থায় রোজা না রাখার হুকুম দিয়েছে এবং এর পরিবর্তে অন্য সময় রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সুতরাং রমজানে স্রাববন্ধকারী ওষুধ ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কারণ এতে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
[জামিউ আহকামিন নিসা ১/১৯৮; ফতোয়া রহীমিয়া ৬/৪০৪]
২. প্রশ্ন : এক ব্যক্তি চোখের অসুস্থতার কারণে ড্রপ ব্যবহার করেন এবং ওষুধের তিক্ততা গলায় অনুভব করেন। প্রশ্ন হলো, রোজা অবস্থায় এ ধরনের ড্রপ ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে কি?
উত্তর : না, রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার কারণে গলায় ওষুধের তিক্ততা অনুভূত হলেও রোজা নষ্ট হয় না। সুতরাং রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার সুযোগ আছে।
[ফাতওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৬৯]
৩. প্রশ্ন : আমি ধূমপানে অভ্যস্ত। রমজান মাসে রোজা রাখা অবস্থায়ও যখন ধূমপান না করার কারণে অস্থিরতা অনুভূত হয়, তখন একটু ধূমপান করি। এতে কি আমার রোজা ভেঙে যাবে?
উত্তর : হ্যাঁ, সামান্য পরিমাণ ধূমপান করলেও রোজা ভেঙে যায়। আর স্বেচ্ছায় ধূমপান করার কারণে কাজা-কাফফারা উভয়টি আদায় করা আবশ্যক হয়। অতএব, আপনি রোজা অবস্থায় যে কয়দিন ধূমপান করবেন, প্রতিটি রোজার ভিন্ন ভিন্ন কাজা আদায় করবেন এবং সবগুলোর জন্য একটি কাফফারাও আদায় করবেন।
[আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৮১]
৪. প্রশ্ন: রমজানের প্রথম কয়দিন আমার খুবই পিপাসা লাগে। তখন আমি ঘন ঘন কুলি করি। ফলে কষ্ট কিছুটা কমে। আমার জন্য তা করা কি ঠিক?
উত্তর: রোজার কারণে পিপাসায় কষ্ট হলে সওয়াবও বেশি হবে। এ সময় বেশি অস্থিরতা প্রকাশ করা ঠিক নয়। তদ্রূপ রোজা অবস্থায় ঘন ঘন কুলি করা বা বারবার মুখে পানি দেওয়াও অনুচিত। অবশ্য এ কারণে গলাতে পানি না গেলে রোজা নষ্ট হবে না।
[মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৩৮; সুনানে আবু দাউদ ৩/১৫৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/২৪১; সুনানে আবু দাউদ ৩/১৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৫; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ৯৯]
৫. প্রশ্ন: গত রমজানে এক হাফেজ সাহেবের পিছনে তারাবীহ নামাজ পড়ছিলাম। তিনি এক রাকাতে সিজদার আয়াত পড়ে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করলেন। সিজদায়ে তিলাওয়াত থেকে উঠে ভুলে আবার সূরা ফাতিহা পড়ে আয়াতে সিজদার পর থেকে কিরাত শুরু করলেন। জানার বিষয় হল, সূরা ফাতিহা দুইবার পড়লে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর : না, উক্ত কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। কারণ সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর ভুলে আবার সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। কিন্তু কেউ যদি সূরা মিলানোর আগেই পর পর দুবার সূরা ফাতিহা পড়ে তবে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
[আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০]
৬. প্রশ্ন: গত রমজানে আমার এক বন্ধু একাকী তারাবীর নামাজ পড়াতে গিয়ে একসাথে চার রাকাত পড়ে ফেলে। দুই রাকাতের পর তাশাহহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং আরো দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরায়। এভাবে চার রাকাত পড়ার দ্বারা কত রাকাত আদায় হয়েছে?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এক সালামে চার রাকাত পড়লেও দুই রাকাতের পর বৈঠক করার কারণে চার রাকাতই তারাবীহ হিসেবে আদায় হয়েছে। তবে তারাবীহ নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে একসাথে চার রাকাত পড়া ঠিক নয়।
[বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪০]
গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ রহমান
Comments 0