একথা অনস্বীকার্য যে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য আলোর গতি অতি উচ্চমানের হওয়া দরকার ছিল। মধ্যযুগ পর্যন্ত মনে করা হতো যে আলোর গতি অসীম এবং কোন একটি ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই আমরা দেখতে পাই। কিন্তু আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক গ্যালিলিও সর্ব প্রথম এই মত ব্যক্ত করেন যে আলোর গতি কখনই অসীম হতে পারেনা।
গ্যালিলিও কতৃক টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের গহ-উপগ্রহ গুলির দিকে নজর দিতে শুরু করেন এবং তখনকার যুগের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারনে বিজ্ঞানীরা নভোমন্ডলীয় পদ্ধতিতে আলোর বেগ নির্ণয় করার চেষ্টা করেন।
প্রাথমিক অবস্থায় কেউ নিখুঁত ভাবে আলোর বেগ নির্ণয় পরিমাপ করতে পারেনি। তবুও তাদের গবেষণার ফলে এটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে আলোর গতি অসীম নয় কিন্তু অতি উচ্চ মানের।
এরপর মহান বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল কোনরুপ প্রযুক্তির সাহায্য না নিয়েই এবং গ্রহ-উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ না করেই কাগজে কলমে তত্ত্বীয় ভাবে আলোর বেগ পরিমাপ করতে সক্ষম হন।
ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব অনুযায়ী আলো তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ ছাড়া কিছুই নয় এবং সকল প্রকার তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের গতিবেগ প্রায় ৩×১০^৮ মিটার/সেকেন্ড। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আলোর গতিবেগ পরিমাপ করেও প্রায় একই গতিবেগ পাওয়া গেছে। ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব আরও ভবিষ্যৎবানী করে যে আলোর গতি একটি ধ্রুব রাশি।
আলোর গতিবেগ নিয়ে সবচেয়ে বিষ্ময়কর তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন মহান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। তার মতে আলোর গতিবেগ শুধুমাত্র ধ্রুবই নয় বরং এটা পরম। আইনস্টাইন তার যুগান্ত সৃষ্টিকারী বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বে এই মত ব্যক্ত করেন যে মহাবিশ্বে একমাত্র একটি জিনিসই পরম আর তা সময় নয় বরং সেটা হল আলোর গতি।
বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী আলোর গতি পরম এবং এটাই মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ গতিবেগ অর্থাৎ কোন কিছুই আলোর চেয়ে দ্রুত চলতে পারেনা। ‘পরম’ শব্দটির অর্থ হল যা কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়। গত একশ বছরে বহুবার পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে আলোর গতিবেগ উৎস এবং পর্যবেক্ষকের আপেক্ষিক গতির উপর নির্ভরশীল নয়; এটা একটি ধ্রুব রাশি।
আইনস্টাইনের এই তত্ত্ব পৃথিবীর মানুষের কাছে বাস্তবতার সংজ্ঞাটাই পাল্টে দেয় সেইসাথে পাল্টে দেয় পদার্থ বিজ্ঞানের সমগ্র কাঠামোটাই। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সমস্ত অংশেই আপেক্ষিক তত্ত্বের সমীকরণ গুলো ব্যাবহার করা হয়।
যদি কোনভাবে প্রমানিত হয় যে আলোর গতি ধ্রুব নয় কিংবা আলোর গতি মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ গতিবেগ নয় তাহলে পাল্টে ফেলতে হবে সমগ্র আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান। এভাবেই আলোর গতিবেগ এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Comments 0