নারিকেল চাষ
বীজতলা ও চারা তৈরী
যে মাটিতে পানি জমে থাকে না, যে মাটি ঝুরঝুরে ও মাটির নিচের পানির স্তর মাটির উপর থেকে কাছে সে মাটিতে নারিকেল ভাল হয়।এ অংশে থাকছে:
ভাল চারা তৈরীর উপযুক্ত গাছ ও নারিকেল বাছাই
বীজতলা তৈরী ও চারা উৎপাদন
উপযুক্ত গাছ ও নারিকেল বাছাই: ভাল চারা পেতে হলে ভাল গাছ ও ভাল নারিকেল দুই-ই লাগবে।
যে গাছ থেকে নারিকেলের চারা করা তৈরী করা হবে সে গাছের নীচের গুণগুলো থাকা চাই:
গাছের বয়স ২৫-৪০ বছর হবে।
অন্তত ৩০-৩৫টি সতেজ পাতা গাছের মাথায় চারিদিকে ছড়িয়ে থাকবে।
পাতার ডাঁট (পত্রবৃন্ত) খাটো ও চওড়া হবে।
কাঁদি খাটো, শক্ত ও সোজা হবে।
কাঁদিতে প্রচুর নারিকেল ধরবে ও ভেতরের শাঁস পুরু হবে।
কাঁদির নারিকেল মাঝারি ও প্রায় গোল হবে।
গাছে বন্ধ্যাফল (শাঁস হয় না এমন নারিকেল) হয় এমন গাছ থেকে চারা তৈরীর জন্য নারিকেল নেওয়া উচিত না।
নারিকেল গাছ সোজা ও মোটা হবে।
গাছটি অবশ্যই রোগ ও পোকা-মাকড় মুক্ত হবে।
ওপরের গুণগুলো আছে এমন গাছ থেকে নারিকেল জোগাড় করতে হবে। চারার জন্য নেওয়া
নারিকেলের নীচের গুণগুলো থাকতে হবে:
আকার ও চেহারা ভাল হবে।
ছোবড়া পাতলা ও খোল বড় হবে।
শাঁস পুরু হবে।
ফল পোক্ত হবে কিন্তু বোঁটা থাকবে।
ওজন অন্য নারিকেলের তুলনায় বেশী হবে।
১১-১২ মাস বয়স্ক নারিকেল বীজ হিসেবে ভাল।
আঘাতমুক্ত বা ক্ষতহীন হবে।
রোগ-বালাই থাকবে না ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত হবে।
বীজতলা তৈরী ও বীজ বপন:
পানি জমে থাকে না, আশেপাশের জায়গা থেকে সমান্য উঁচু, কিছুটা ছায়া ও কিছুটা রোদ পড়ে এবং বেলেমাটি নারিকেল চারা তৈরীর জন্য উপযুক্ত।
তবে সেচ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকলে রোদ পড়ে এমন জমিতেও চারা তৈরী করা যেতে পারে।
কাদামাটি এলাকায় নারিকেলের চারা উৎপাদন করা উচিত না। মাটি কাদা ধরনের হলে জমির ওপরের এক ফুট মাটি সরিয়ে তা বালি দিয়ে ভরাট করতে হবে।
বীজতলা পাশের জমি থেকে ৪-৬ ইঞ্চি উঁচু হতে হবে।
প্রতি দুইটি বীজতলার মাঝখানে যথেষ্ট খালি জায়গা (নালা) রাখতে হবে। তাতে চারার যত্ন নিতে সুবিধা হয়৷
বীজতলার চওড়া তিন ফুটের বেশী হওয়া উচিত না।
3.jpg
চিত্র: বীজতলা
বীজতলার মাটি ভাল করে কুপিয়ে কম্পোস্ট বা গোবর সার মিশাতে হবে।
বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত বীজতলায় নারিকেল বোনার উপযুক্ত সময়৷
বীজতলার মাটি কখনও শুকাতে দেওয়া চলবে না। তাই নিয়মিত পানি দিতে হবে। বর্ষার সময় যাতে বীজতলায় পানি জমে না যায় সেদিকেও সজাগ থাকতে হবে।
বোনার আগে নারিকেল দুই সপ্তাহ পানিতে ভিজিয়ে নিলে চারা তাড়াতাড়ি গজায়।
নারিকেল তিনটি শির বা পিঠ থাকে। প্রশস্ত শিরাটি উপরে রেখে মাটির উপর লম্বালম্বি ভাবে বুনতে হবে। খাড়াভাবে নারিকেল বুনলে চারা গজানোর হার কমে যায়, গজানো চারা দুর্বল হয় এবং চারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ার সময় ক্ষতি হয় বেশী।
কখনোই নারিকেল মাটির নীচে সম্পূর্ণ চাপা দেওয়া উচিত নয়৷ এমনভাবে বুনতে হবে যাতে নারিকেলের সামান্য অংশ বাইরে থেকে দেখা যায়।
4.jpg 7.jpg 5.jpg
চিত্র: বীজতলায় নারিকেল লাগানোর পদ্ধতি
নারিকেলের পাতা দিয়ে বীজতলাকে ঢেকে রাখলে ভাল ফল পাওয়া যায়৷
বীজতলা থেকে নিয়মিত আগাছা তুলে ফেলতে হবে।
তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই বেশীর ভাগ নারিকেল থেকে চারা গজিয়ে যায় এবং ছয় মাসের মধ্যে কোনো নারিকেলের চারা না গজালে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
নারিকেল বপনের পর ৬/৭ মাস পর্যন্ত চারা গাছ নারিকেলে জমা খাবার খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে। এই সময়ের পর বীজতলায় কিছু ইউরিয়া, পটাশ ও লবণ দেওয়া উচিত।
সারের পরিমাণ
সার প্রতি শতাংশে
ইউরিয়া ৪ কেজি
এমপি ৬ কেজি
টিএসপি ১ কেজি
লবণ ২ কেজি
সার দেওয়ার পর সেচ দিতে হবে।
বীজ বোনার পর ঌ-১২ মাস পর চারা মূল জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়।
Reference
Comments 1